RAMNAGAR HIGH SCHOOL (H.S)

DISE CODE - 19090306103

02/09/2024 9:28 AM

বিদ্যালয়ের ইতিকথা

একশ বছর আগে ঐ কর্মকান্ডের নায়ক ছিলেন খটনগর গ্রামের মাননীয় জমিদার সতীশচন্দ্র ঘোষ । তিনিই ছিলেন ঐ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক । সে সময় মালিয়াড়া ও রামনগরে দুটি পাঠশালা ছিল । পাঠশালা দুটি চালাতেন যথাক্রমে – মহেশ্বর ঘোষ এবং বলরাম মজুমদার । সেদিন ঐ পাঠশালা দুটি একত্রিত হয়ে একটি সুসংহত বিদ্যালয় আত্মপ্রকাশ করেছিল । সতীশচন্দ্র ঘোষকে তাঁর ঐ মহৎ উদ্দেশ্য রূপায়নে যাঁরা সক্রিয়ভাবে সেদিন সাহায্য করেছিলেন , তাঁরা হলেন যথাক্রমে সাতকড়ি মন্ডল এবং আশুতোষ মন্ডল । উভয়েই তাঁরা মালিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা । বিদ্যালয়টির সম্পাদক ছিলেন গিরীশ চন্দ্র মিত্র , যিনি রামনগরের বাসিন্দা ছিলেন ।
নব প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক ছাড়া আরও দু’জন সহকারী শিক্ষক ছিলেন । তাঁদের নাম ভূপতি নাথ ঘোষ এবং সুরেন্দ্র মিত্র । প্রথম অবস্থায় বিদ্যালয়টির নিজস্ব কোন ভবন ছিল না । প্রথমে প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের বৈঠকখানায় বিদ্যালয়ের কাজ শুরু হয় পরে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ঐ গ্রামরই – হরিদাস মজুমদার মহাশয়ের বৈঠকখানায় তা স্থানান্তরিত হয় । এবং শেষে ঐ একই কারণে রামনগরে বিদ্যালয়ে সম্পাদক গিরীশ চন্দ্র মিত্র মহাশয়ের মায়ের চন্ডিমন্ডপ তলায় সেটি উঠে আসে ।
তার কয়েক বছর মধ্যে বিদ্যালয়টির একটি নিজস্ব ভবন হল বামনগর গ্রামের একেবারে উত্তরে ( বর্তমান পঞ্চায়েত ভবনের সন্নিকটে ) মাটির দেওয়াল দেওয়া একটি বড় মাপের খড়ের চাল বিশিষ্ট । ঘর নির্মিত হল । ঘরটির চারিদিকে মাটির দেওয়াল দেওয়া টিনের ছাউনি ছিল । পরে ঐ বিদ্যালয় ভবনের পশ্চিম দিকে উত্তর দক্ষিণে লম্বা আরও দুটি ঘর নির্মিত হয় ।
ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছিল । সে সময় বিদ্যালয় – পরিদর্শকের দ্বারাও বিদ্যালয়ের পঠন – পাঠনের মান সবিশেষ প্রশংসিত হয় । বিদ্যালয়ের ছাত্ররা ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষাতেও বৃত্তি লাভ করত । প্রথম বার যে ছাত্রটি ঐ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে বৃত্তি পেয়েছিল তার নাম – শরৎ চন্দ্র মন্ডল । এবং ঐ গৌরব জনক ঘটনার পরই বিদ্যালয়টি ME School -এ উন্নতি হয় । বিদ্যালয়ের রেকর্ড থেকে জানা যায় : প্রধান শিক্ষক ছিলেন – সতীশ চন্দ্র ঘোষ তারপরই দ্বিতীয় প্রধান শিক্ষক হলেন -শরৎ চন্দ্র মন্ডল পরে ঐ পদ অলংকৃত করেন যথাক্রমে, -যোগিন্দ্র নারায়ণ মিত্র এবং  রাম নারায়ণ মজুমদার ।
তবে এখানে উল্লেখযোগ্য যে, রামনারায়ণ মজুমদার এবং তার সমসমন্বিন্ত কালের অন্যানা সহকারী শিক্ষক গণের শিক্ষন কুশলতায় বিদ্যালয়টির সুনাম এই এলাকার বাইরে পাশ্ববর্তী জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছিল । বিশেষ করে – রামনারায়ণ মজুমদার মশায়ে প্রগাঢ় পান্ডিত্য ও ব্যক্তিত্ব তাঁর ছাত্রগণ এবং এলাকার মানুষ এখনও পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরন করে থাকে।
এরপর শুধুই গড়ার কথা – উত্তরণের কাহিনী । যেমন ১৯৫০ – ৫১ সাল থেকে বিদ্যালয়টিকে জুনিয়র হাই স্কুল রূপে উন্নীত করার চিন্তা ভাবনা শুরু হলেও সরকারী অনুমোদন পাওয়া যায় ১৯৫৪ – ৫৫ সালে । এই সময় এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী যুবক বিদ্যালয়টির উন্নয়নের সংকল্প নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন । তাঁদের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন নবনীধর মিত্র , মহাদেব চট্টোপাধ্যায় , বিকাশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়  এবং – সুধাংশু শেখর রায় প্রমুখেরা । তার ফলে ১৯৫৭ সালে বিদ্যালয়ের পরিচালক সমিতিতে যুগ্ম সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন যথাক্রমে রামনগর গ্রামের নবনীধর মিত্র এবং দীননাথপুর গ্রামের বিকাশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় । ঐ পরিচালক সমিতির সভাপতি ছিলেন । খটনগর গ্রামের বাসিন্দা এবং বিশিষ্ট আইনজীবী – প্রদ্যোৎ কুমার ঘোষ এবং সহ – সভাপতি ছিলেন রামনগর গ্রামের বিশিষ্ট চিকিৎসক – শশীভূষণ ঘোষ ।
নবগঠিত ঐ পরিচালক সমিতি বিদ্যালয়টিকে সিনিয়র বেসিক বা উচ্চ বুনিয়াদী  বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন । কারণ সিনিয়ার বেসিক স্কুলগুলির আর্থিক সচ্ছলতা জুনিয়র হাই – স্কুলগুলির থেকে অনেক ভাল ছিল । সরকারী অনুদান  সিনিয়ার বেসিক স্কুলগুলিতে বেশী পাওয়া যেত । যদিও উভয় স্কুলই অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত তবু শুধু মাত্র আর্থিক কারণেই ঐ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল সেদিন পরিচালক সমিতিকে । এই ব্যাপারে পরিচালক সমিতিকে বিশেষভাবে যিনি সাহায্য করেছিলেন , তিনি হলেন শিক্ষা বিভাগের সেসময়কার ডেপুটি ডাইরেক্টর এবং মহাদেব চট্টোপাধ্যায়ের ,অধ্যাপক অমিয় কুমার সেন মহাশয় ।
কিন্তু পরিকল্পিত বিদ্যালয়টির গৃহ সমস্যাই এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হিসাবে দেখা দিল । কারণ জুনিয়র হাইস্কুলটি যেখানে চলছিল , সেখানে তিন কুঠুরি করে ছয় কুঠুরির দুটি ভবন তৈরীর মত জায়গা ছিল না আর ঐ পুরাতন ভবনটিও মাটির তৈরী , পাকা বাড়ী নয় । অতএব প্রস্তাবিত সিনিয়ার বেসিক স্কুলটির নতুন ভবন তৈরীর জন্য উপযুক্ত জায়গার সন্ধান চলতে লাগল । শেষে অনেক আলাপ আলোচনার পর রামনগর গ্রামের একেবারে দক্ষিণ দিকে সিংবাগান নামক আমবাগানে ( বর্তমানে এই উচ্চ বিদ্যালয়টি যেখানে অবস্থিত ) সিনিয়ার বেসিক স্কুলের ভবন তৈরী শুরু হল ।
সিং বাগানটি রামনগরের মিত্র পরিবারে নিজস্ব বাগান ছিল  এবং ঐ বাগানে নবনীধর মিত্র অংশই বেশী ছিল । তিনি রেজিষ্ট্রি দলিল করে জায়গাটি স্কুলকে দান করেন । বাকী অংশের মালিক ছিলেন যথাক্রমে তারাপদ মিত্র , শক্তিপদ মিত্র ও বিষ্ণুনারায়ণ মিত্র এবং অন্যান্য ভাইরা । তাঁরাও তাঁদের অংশ বিদ্যালয়কে দান করেন । । যা , যথা সময়েই সিনিয়ার বেসিক স্কুলের অনুমোদন পাওয়া গেল । সিনিয়র বেসিক স্কুলটিকে পরে উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা মাথায় রেখেই বিদ্যালয়ের ছয় কুঠুরির ভবন দুটি বেশ মজবুত ভিত সহযোগে নির্মাণ করা এবং মাথায় টিনের ছাউনীর পরিবর্তে পাকা ছাদ করার ব্যবস্থা হয়েছিল , যাতে ভবিষ্যতে ভবন দুটিকে দ্বিতল ভবনের রূপ দেওয়া যায় । ফলে সরকারী অনুদানের টাকায় নির্মানের কাজ শেষ হল না । খরচ বেশী হওয়ায় কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে ঋণের বোঝা চেপে বসল । পরবর্তীকালে ঠিকাদারের দেনা শোধ করতে  নবনীধর মিত্রের স্বার্থত্যাগ আজ সর্বজন স্বিকৃত।
সিনিয়ার বেসিক স্কুলটি কাজ শুরু করার বছরের মধ্যেই স্বনামধন্য প্রধান শিক্ষক রামনারায়ন মজুমদার অবসর গ্রহণ করলেন । তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন শ্রীগঙ্গধর পাল । তবে এখানে উল্লেখ্য যে , শ্রী গঙ্গাধর পালের দায়িত্ব গ্রহণের আগে স্বল্পকালের জন্য যাঁরা এই সিনিয়ার বেসিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন , তাঁরা হলেন শ্রী নিখিল দাস , সৌরীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শ্রী চণ্ডীদাস রায় । ঐ সময়কালে সহকারী শিক্ষক রূপে কাজে যোগ দিয়েছিলেন জগদীশ্বর চক্রবর্তী ।
এরপর পরিচালক সমিতির পুর্নগঠন হল । এবং সেই পরিচালক সমিতি সিদ্ধান্ত নিলেন ১৯৬৩ সাল থেকে নবম শ্রেণীতে ছাত্র ভর্তি শুরু করা হবে । এই নবগঠিত পরিচালক সমিতিই বলতে গেলে রামনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম পরিচালক সমিতি । এর সভাপতি ছিলেন রামনগর গ্রামের মহাদেব চট্টোপাধ্যায় , সহ – সভাপতি ছিলেন উল্লাসপুর গ্রামের এককড়ি পাঠক এবং সম্পাদক ছিলেন রামনগর গ্রামের নবনীধর মিত্র । ঐ পরিচালক সমিতির সদস্য না হয়েও ঐ সময় আর যিনি রামনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের গঠন পর্বে সবিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন , তিনি হলেন খটনগর গ্রামের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি  সুধাংশু শেখর রায় ।
কিন্তু উচ্চ বিদ্যালয় গঠনের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে কয়েকটি সমস্যা প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াল । যেমন , অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নাই , পর্যাপ্ত শিক্ষক এবং উপযুক্ত পরিকাঠামো নাই , এবং প্রয়োজনীয় ছাত্রছাত্রী নাই । কিন্তু সেদিনের কর্ণধারদের  উদ্যম ও সাহস শেষ পর্যন্ত সব বাধাকেই নস্যাৎ করে দিতে সক্ষম হয়েছিল । তাই নবম শ্রেণীতে ছাত্রভর্তি যেমন চলতে লাগল , তেমনিই চলতে লাগল শিক্ষক নিয়োগের কাজ এবং শুরু হয়ে গেল জনসাধারণের আন্তরিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে চার কুঠুরির একটি ভবন নির্মানের কাজও ।
ছাত্র সংগ্রহের ব্যাপারে ঐ সময় যিনি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন , তিনি হলেন রামনগর গ্রামের বিশিষ্ট ব্যাক্তি ক্ষিতীশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় । কয়েক মাইল দূরবর্তী আদুরিয়া জুনিয়র হাইস্কুলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ট সংযোগ থাকার সূত্রে তিনি ঐ বিদ্যালয় থেকে বহু ছাত্র এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে একটি বড় সমসার সমাধান করেছিলেন সেদিন । এছাড়া আর যিনি এই ব্যাপারে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছিলেন , তিনি হলেন রামনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের নব নিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শ্রী গৌর গোপাল ঘোষ। তিনি তখন ইলামবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকার কারণে ঐ বিদ্যালয়ের বহু ছাত্রকে এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন । অবশ্য তিনি খুব বেশী দিন এই বিদ্যালয়ে থাকেন নাই । এখানে থেকে তিনি কাসেমনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন । এ সময় যে সব শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছিলেন , তাঁরা হলেন , শ্রীসুদেব চন্দ্র চক্রবর্তী , শ্রী পবিত্র কুমার ঘোষ, শ্রী শেখরৱেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় , মহম্মদ তৈয়ব আলি এবং হেতমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত বিশিষ্ট শিক্ষক হরিপদ ধর এবং অনিল কুমার ঘোষ এবং শিক্ষিকা শ্রীমতি ৱেখা মহন্ত । তাঁর শূণ্যস্থানে পরে আসেন শ্রীমতি রেনুশ্রী অধিকারী ।
সরকারীভাবে রামনগর উচ্চ বিদ্যালয় অনুমোদন পেল ১৯৬৪ সালে । ১৯৬৫ সালে ৭ জন ছাত্র – ছাত্রী প্রথম এই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল ফাইন্যাল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন এবং ৭ জনই কৃতিত্বের সঙ্গে সফলকাম হন । এই সময় বিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের সর্বজন শ্রদ্ধেয় সতীনাথ ভট্টাচার্য পরলোক গমন করেন । এ সম সাময়িক কালে শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হনে শ্রী সুজিত কুমার চট্টোপাধ্যায় এবং অমর বন্ধোপা্ধ্যায়। তার কিছুদিনের মধ্যে সৈয়দ নাজির হোসেন, শ্রী বিনয় কুমার ভৌমিক এবং তারও পরে শ্ৰী পঙ্কর কুমার চট্টোপাধ্যায় ।
১৯৬৩ সালেই বিদ্যালয়ের পশ্চিমদিকে একটি চার কুঠুরির ভবন নির্মানের কাজ শুরু হয়েছিল । এবার ঐ গৃহ নির্মান এবং উচ্চ বিদ্যালয়টির অনু্মোদন লাভের জন্য প্রয়োজনীয় রিজার্ভ ফাণ্ড গঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহে কাজ শুরু হয়ে গেল । পরিচালক সমিতির সঙ্গে স্থানীয় এলাকার সকল মানুষ এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ পূর্ণ উদ্যমে ঐ কর্মযজ্ঞে অংশ নিয়েছিলেন । সেদিন কেউ দিয়েছে কেউবা বেতনের দুই তৃতীয়াংশ টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ণে দান করতেন । ৫/৬ মাস বেতন পেয়েও তাঁরা সাতটির মধ্যে ছয়টি পিরিয়ড প্রতিদিন নিতেন । কারণ শিক্ষকের সংখ্যা কম ছিল । ছাত্রদের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতার বিষয়টি তাঁরা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে গেছেন । এমন কি ছুটির দিনেও তাঁরা ছাত্রভর্তির মরসুমে গ্রামে গ্রামে ছাত্র সংগ্রহের জন্য ঘুরেছেন । একাদ্বশ শ্রেণীর উচ্চ মাধ্যমিক কোর্স চালু করার স্বার্থে তাঁরা নিজেদের ৫-৬ মাসের বকেয়া বেতন সেদিন লিখিত ভাবে প্রাপ্তি স্বীকার করে এক মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন । যদিও দীর্ঘ মেয়াদি কিস্তির ভিত্তিতে ঐ টাকা তাঁরা ফেরৎ পেয়েছিলেন , তবু ঐ স্বার্থত্যাগ টুকু সেদিন যদি তাঁরা না করতেন তবে একাদ্বশ শ্রেণীর উচ্চ মাধ্যমিক কোর্স আর খোলা সম্ভব হত না ।
এবার স্মরণ করছি এই বিদ্যালয়ের একজন অবসর প্রাপ্ত মহিয়সী শিক্ষিকার অবদানের কথা । তিনি শ্রীমতি রেণুশ্রী অধিকারী । এই বিদ্যালয়কে তিনি তাঁর বসত বাড়ীটি রেজিষ্ট্রি দলিল করে দান করেছেন , যাতে তাঁর অবর্তমানে বাড়ীটি বিদ্যালয়ের অধিকারে আসে । এমনকি তিনি তাঁর মাসিক সঞ্চয় প্রকল্পের তিন লক্ষ টাকার নমিনি ও এই বিদ্যালয়কে করেন । সর্বপরি তাঁর দানের টাকাতেই আমরা এই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম সম্পাদক ও মহান দাতা নবনীধর মিত্রের আবক্ষ মর্মর মূর্তি এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি , বিদ্যালয়ের অসম্পূর্ণ বিদ্যুতায়নের কিছু কাজ সম্পূর্ণ করতে পেরেছি । এই দুটি উদ্দেশ্যে তিনি মোট এক লক্ষ টাকা দান করেন ।
নবনীধর মিত্রের স্বার্থত্যাগ ও মহান দানের কথা এই এলাকার কারও কাছে অবিদিত নয় । এছাড়া তাঁর সদাহাস্যময় মধুর ব্যবহার তাঁকে সকলের কাছেই প্রিয় করে তুলেছিল । তাঁর শিক্ষক – দরদী ভূমিকার জন্য শিক্ষকদেরও কাছের মানুষ ছিলেন তিনি । শিক্ষকদের দুর্দিনে তিনি চড়া সুদে কাবুলিওয়ালার কাছে কিংবা মূল্যবান সামগ্রি বন্ধক রেখে মহাজনের কাছ থেকে টাকা এনে তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতেন । তাই অনেক মানুষের অন্তরের বাসনা ছিল , এই বিদ্যালয়ই ছিল যার ধ্যান – জ্ঞান , তাঁর একটি মর্মর মূর্তি এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করা হোক । শ্রীমতি রেনুশ্রী অধিকারীর দানেই তা বাস্তবায়িত হওয়ায় আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ । আর একজন স্কুল – দরদী মানুষের স্মৃতি কখনই  ভোলার নয় । তিনি এই বিদ্যালয়ের আর এক প্রাক্তন সম্পাদক অমিত কুমার চট্টোপাধ্যায় । নবনীধর মিত্রের জীবদ্দশায় তাঁর অনেক কর্মকাণ্ডের তিনিও সহযোগী ছিলেন । বলা যায় তিনি তাঁর অন্যতম ছায়া – সঙ্গী ছিলেন ।তাঁর এবং ঐ সমসাময়িক কালের প্রধান শিক্ষক শ্ৰী আদিত্য চরণ ঘোষ মশায়ের উদ্যোগে ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়টি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয় । আজ এই বিদ্যালয় শতবর্ষ প্রাচীন একটি বিদ্যালয়।

Scroll to Top
Ramnagr High School